ব্রেকআপ এবং সাইকো থেরাপি - Zunayed Evan
"ব্রেকাপ কেন হয় এর একশটা কারণ থাকতে পারে তবে ব্রেকাপের পর সম্পর্ক গুলো এত পানসে কেন হয়? ? একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতিদিন গড়ে এক লক্ষ ৪২ হাজার সম্পর্ক হচ্ছে আর ব্রেকাপ হচ্ছে ১ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি !!
একটি মানুষ যখন কিছুটা দূরে থাকে তখন আমরা ক্যামেরা জুম করে তাকে কাছে নিয়ে আসি। এই পর্যন্ত ঠিক আছে... বেশি জুম করা ভাল না... বেশি জুম করলে চেহারা ফেটে যায়... ত্বকের বিশ্রী দাগ চোখে এসে লাগে... সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একি নিয়ম... বেশি কাছাকাছি মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়.....তাকে রেস্পেক্ট করবেন...
তার মতামতের গুরুত্ব দিবেন... এইগুলা ঠিক আছে... তবে দেবদাসের মত নিজের সব পছন্দ অপছন্দ বিলিয়ে দিবেন না। নিজের একটা আলাদা আইডেনটিটি আছে... সেটা ধরে রাখুন... তার কদম ভাললাগে এটা জানার পর জানিয়ে দিন কদম আপনার অসহ্য লাগে... এর ঘ্রাণ দুর্গন্ধময় ! বেশিরভাগ মানুষ সম্পর্ক সুন্দর করার জন্য মিথ্যের আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি একটি বই পড়ে জেনেছি মিথ্যে বলা সত্যের থেকে ত্রিশ গুণ কঠিন কাজ।
অন্যকে খুশি করতে গিয়ে প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ কথা বলার সময় প্রতি ১০ মিনিটে একটা মিথ্যে বলে। সে এবং আপনি আপনারা একি মানুষ। এইগুলা বোকামানুষের কথা। আপনাকে তার মত হবার দরকার নেই। তাকেও আপনার মত বানানোর প্রয়োজন নেই।
আছা... ব্রেকাপের পর সম্পর্ক গুলো এত পানসে কেন হয়? দুজন মানুষের এডজাস্টমেন্ট নাই হতে পারে। এর পর আর কোনদিন তার মুখ দেখা যাবে না। তার সাথে কথা বলা যাবে না। সে হল শত্রু পক্ষ !
ভাবা যায় দিনের পর দিন আমরা এই ছেলেমানুষি গুলো করে আসছি। একজন না খেলে অন্যজন খায় না। একজনের ঘুম না এলে অন্যজন ঘুমায় না। একজন টেনশনে থাকলে অন্যজন সেই টেনশন কেড়ে নেয়... একজন পরীক্ষায় খারাপ করলে ফোনের ওপাশ থেকে অন্যজন কান্না করে।সেই একি মানুষ গুলোই সামান্য ব্রেকাপ হলে একজন অন্যকে গালাগালি করে বেড়ায় ! মানুষকে ভালবাসতে শিখুন। মৃত্যুর আগে টলস্তয়ের শেষ কথা ছিল ' আমি পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে ভালবাসি'
সম্পর্কের ডেফিনেশন কী ? সমরেশ পড়েছেন? মাধুবিলতার কথা মনে আছে ?
অনিমেশ ? অনিমেশ প্রতিবন্ধী... হাঁটতে পারে না। তাদের ছেলে একদিন জিজ্ঞাসা করল; তারা কেন বিয়ে করে নি ? মাধুবিলতার জবাব ছিল ; কাগজের দরকার হয় নি... তাই করে নি; সে যে একজন প্রতিবন্ধি মানুষকে বছরের পর বছর আগলে রেখেছে এই সম্পর্কটা কী যথেষ্ট না?
সম্পর্ক কোন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের রিকোয়েস্ট না; একসেপ্ট করলেই শুরু হয়ে গেল আর রিমোভ করলেই শেষ। একটা মানুষ মারা যাবার পরেও সম্পর্কগুলো দাবী ছাড়ে না। ফ্রেমের শুকনো ছবি মুখে এনে চুমো খাবে। বুকের কাছে এনে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিবে। কোনদিন যদি আবার কথা হয়; তবে কী কথা বলবে এইসব ভেবে জায়নামাজে বসে পড়বে।
মানুষটাকে এখন না হোক; এককালে তো ভালোবাসতেন ? অন্তত সেই দাবীতে সম্পর্কটাকে ভালবাসুন।
"ব্রেকাপের পর ব্যাসিক ৩ টা স্টেজ থাকে :
১ – মানুষটিকে পাওয়া হয় নি, এই জন্য না... খারাপ লাগবে মানুষটি তার বিশ্বাস ভেঙ্গেছে এই জন্য।
২- ভাল সৃতি গুলোই কাঁদাবে। কবে তারা সিঁড়ি ঘরে জড়িয়েছিল চুপচাপ... কবে নেভালে বসে পেঁয়াজু খেয়েছে... সব মনে পড়বে...
৩ – যদিও তাকে দেখে মনে হবে সে খুব চুপচাপ... কথা বলছে না... তবে সে আসলে অনেক বেশি কথা বলতে চায়। সব খুলে বলার জন্য কাছের দু একজন মানুষকে বেছে নিবে।
মজার ব্যাপার হল এই সব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ বেছে নেয় বিপরীত লিঙ্গের কাউকে !! এরকম কেউ আপনাকে রাত দুটা বাজে ফোন করলে, ভুলেও তাকে কোন জ্ঞান দেবার চেষ্টা করবেন না। জ্ঞানের দরকার হলে সে বই ম্যাগাজিন পড়ত; সে আপনার কাছে পরামর্শের জন্য আসে নি; কাঁদতে এসেছে। কথা বলে হালকা হতে এসেছে।
পৃথিবীর সব থেকে বড় সাইকো থেরাপি হল – মন দিয়ে কারো কথা শোনা... আচ্ছা... কেউ চলে চলে এই যে হঠাৎ রাতে বুকের মাংস পেশী তে চিনচিন করে... এর থেকে মুক্ত হতে কত সময় লাগে ? এ নিয়ে সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই তবে মনোবিজ্ঞানীরা ব্যাথার প্রথম স্তর কাটিয়ে উঠাকেকেই গুরুত্ব দিয়ে গেছে। বাকী সব কিছুর জন্য চোখ বন্ধ করে সময়ের উপর বিশ্বাস রাখতে বলেছে !
এই সময়ে মানুষ অনেকটা OCD তে আক্রান্ত রোগীর মত আচরণ করে... এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা একি জিনিস বার বার চিন্তা করে... একি কাজ বার বার করে... একটা চিন্তা শুরু থেকে শেষ করে সেটা আবার প্রথম থেকে শুরু করবে...
এই রোগ থেকে মুক্তি চান ? প্রথমে একটি খাতা কলম নিয়ে সব লিখে ফেলুন.. আপনার ক্রোধ , ঘৃণা্, হতাশা আপনার মস্তিস্ক থেকে লিখার ভেতরে চলে এসেছে... তারপর লিখাটি ছিড়ে ফেলে দিবেন... একি সাথে ঘৃণা্ এবং হতাশাও প্রথমে মন থেকে কাগজে তারপর কাগজ থেকে ছিড়ে ড্রেনে হারিয়ে গেল... !
শুনতে হাস্যকর শোনালেও এই ফর্মুলা অনেক কার্যকরী... এই ফর্মুলা আমি কোয়ান্টাম মেথডেও পেয়েছি। বিখ্যাত সাইক্রিয়াটিস্ট এলিজাবেথ ব্রডবেন্ট ও এই হাস্যকর কাজটি করতে বলেছেন।
আমার প্রেসক্রিপশন হল - প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ভরা পেটে দুই টা ট্যাবলেট খাবারের বদলে দুই পৃষ্ঠা করে লিখুন... যত কুৎসিত হোক , ভহাবহ হক... আপনি কিছুই লুকাবেন না... কোন কিছু নিজের ভেতরে রেখে দেবার চাইতে 'এ' ফোর সাইজের কিছু কাগজকে দিয়ে দিন।
কাগজ কথা বলতে পারে না...শুধু কথা নিতে পারে... এই জন্যই লিখলে আমাদের মন শান্ত হবে। যিনি লিখছেন তিনি কথা বলছেন; কাগজ কথা শুনছে...সাইকো থেরাপির কাজ চলছে...!
Writer - Zunayed Evan
Comments
Post a Comment
ধন্যবাদ,
আপনার মতামতে'র জন্য।