সম্পর্ক এবং অনুভূতি - Zunayed Evan
"অনেক সময় আমরা না বুঝেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। কিছুদিন কথা বলে ভাল লাগা থেকেই। এটা এক ধরনের ঘোর। প্রত্যেকের জীবনে এই ঘোর টা আসে। হঠাৎ এক বৃষ্টির রাতে রিক্সার হুড তুলে কেউ একজন চলে যাচ্ছে; মুহূর্তের জন্য মনে হবে - এই মানুষটিকেই তো আমি খুঁজছি।
কিছুদিন কথা হলেই মনে হবে তাকে না পেলে বেঁচে থাকার কোনই মানে হয় না। পুরো ব্যাপারটি ঘটে ‘সেরোটোনিন’ নামে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদানের কারণে। এটি মানুষকে এক অর্থে বিভ্রমে নিয়ে যায়।
আমরা আসলে ঠিক কাকে খুঁজি আমরা জানি না। খুব সুন্দরের প্রতি অনেকের খুব আকর্ষণ। তবে যত সুন্দর দৃশ্যই হোক এক সময় চোখ সয়ে যায়। ট্রেনে উঠার পর দেখবেন প্রথম দিকে সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে জানালা ধরে তাকিয়ে থাকে। খাল বিল... চিল...হাডুডু চাঁদ... তবুও এক সময় একঘেয়ামি চলে আসে। জানালা লাগিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা।
মানুষের খুব খারাপ সময় কোন বিপরীত লিঙ্গ কাছে এসে দাঁড়ালে সে প্রবল আবেগে চলে যায়। সেই বিশেষ মুহূর্তে তার এক ধরনের আবেগ জন্ম নেয়। সেই মুহূর্ত আর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এক বিষয় না; এই ব্যাপারটা অনেকেই বুঝতে পারে না।
অনেক ক্ষেত্রে দেখবেন কারো ব্রেকাপ হলে তার খুব কাছের কোন বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু তাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে এবং কীভাবে কীভাবে যেন তার সাথেই সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। এই ব্যাপারগুলো সাধারণত এইসব কারণে ঘটে। অনেক সময় আমরা না বুঝেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। এটা খুব বিপদজনক। এক সময় সে টের পায় সে কিছু বোধ করছে না; তবু ছেড়ে আসতে পারে না। নেহাত কিছু প্রতিশ্রুতির ভয়ে।
পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ একি ছাদের নিচে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে শুধু মাত্র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য। এর পর অনেক কিছুই হতে পারে। যদি সে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখে তবে সে প্রথমে নিজেকে ঠকায় এবং একি সাথে তার কাছের মানুষটিকেও।
বছরের পর বছর মানুষ অভিনয় করতে পারে না। এক সময় আর বলা হয় না – চল ছাদে যাই। আজ তোমাকে কী যে খুব সুন্দর লাগছে! বেশির ভাগ সম্পর্কে এক সময় প্রেম থাকে না। মায়া চলে আসে। প্রেম তোমাকে আকর্ষিত করবে। সম্পর্কের বাঁধন মায়া তোমার হাতে দায়িত্ব তুলে দিবে।
প্রকৃতি সব সময় তার মত করে ভারসাম্য রক্ষা করে। একটা কেড়ে নিলে অন্যএকটি দিয়ে পুষিয়ে দেয়। এই যেমন বৃদ্ধদের শক্তি কেড়ে নেয় অভিজ্ঞতার বিনিময়ে। পুরো ব্যাপারটি ঘটে সূক্ষ্ম ভাবে। অনেক বছর পর আপনাকে কেউ দেখলে অবাক হয়ে বলে – আরে তোমার চেহারা তো অনেক বদলে গেছে... অথচ রোজ কত বার আপনে আয়নার সামনে দাড়িয়ে থেকেও এই ব্যাপারটি ধরতে পারেন নি।
...আপনে টের ই পান নি; কীভাবে কৈশোরের মুখ টা একদিন বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে... একদিন একদিন করে... একি ভাবেই টের পাবেন না; কিভাবে প্রেমটা পরিণত হচ্ছে মায়ায়! একটু একটু করে! "
"সম্পর্কের তিনটা স্তর আছে। প্রথমটি মোহ। বেশির ভাগ মানুষ এক ধরনের মোহ থেকে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। মোহটা এমন হয় যে সে যত দূরেই থাকুক, যত অসাধ্য হোক তবু তাকে চাই। এখান থেকেই তাকে জয় করার একটা ব্যাপার চলে আসে। যে করেই হোক তাকে পেতে হবে।
তার পরের স্টেইজে সে চলে যায় ফ্যান্টাসিতে। এটি দ্বিতীয় স্তর। মোহের বিস্তীর্ণ পরিণতিই ডেকে আনে এই ফ্যান্টাসি। সাদামাটা একটা এসএমএস পড়া হয় একশ বার। তার ব্যাবহার করা টিস্যু সাথে রেখে দেয়া, সে চকলেট খেলে সেই চকলেটের প্যাকেট পকেটে রেখে দেয়ার মত পাগলামী গুলো এই সময়েই ঘটে।
এই সময়টাই সব থেকে সুন্দর সময়। তাকে কিছুটা পাওয়া এবং কিছুটা না পাওয়ার একটা ব্যাপার ঘটতে থাকে। মুশকিল হল, যে মুহূর্তে সে তাকে পেয়ে যাবে সেই মুহূর্ত থেকে তাকে জয় করার আর কিছু থাকে না।
তারপর কী সম্পর্ক ফিকে হয়ে যায়? তাহলে বছরের পর বছর এক ছাদে কী করে থাকে? হমম থাকে। এই সময় সে ফ্যান্টাসি স্টেইজ থেকে চলে যায় তৃতীয় স্তরে। এটি মায়া। অনেক দিন একটা মানুষের সাথে কথা বললে এক ধরনের মায়া তৈরি হয়।
তেলাপিয়া মাছ সে পছন্দ করে না বলে বাজার থেকে শৈল মাছ নিয়ে আসা। শৈল মাছের ঝোল তার খুব পছন্দ। রাতে ফার্মেসীতে গিয়ে এক পাতা ক্লোনাট্রিল কিনে আনা। না খেলে তার ঘুম হয় না। এই সময় একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে অনেক খুটিনাটি ভাবে জানে। বেশি খুঁটিনাটি জানার একটি দিক হল মায়া জন্মে যায় আরেকটি দিক হল মোহ কেটে যায়।
এক যুগ আগের মত ঘুম থেকে উঠে বলা হয় না - ‘ও বউ একটু সাজগুজ করো…চা খেতে খেতে দেখব তোমাকে''!
Writer - Zunayed Evan
ভাইয়া আমার টাইম লাইন থেকে লেখাটা কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দিলেন।
ReplyDelete